লাখো মানুষের উপস্থিতিতে আত্রাই নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসব

লাখো মানুষের উপস্থিতিতে নাটোরের সিংড়ার আত্রাই নদীতে উত্তঞ্চলের সর্ববৃহৎ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় নদীর দু-পাড়ে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছিল লাখো মানুষের ভিড়।

গতকাল শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিংড়া আত্রাই নদীতে চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসব'র উদ্যোক্তা ও প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এড জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে নৌকা বাইচ উপলক্ষে সকাল থেকেই দুর-দুরান্ত থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসতে থাকেন। নদীর পাড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। অনেকে পরিবার, প্রিয়জন ও বন্ধুদের সঙ্গে নৌকা বাইচ উপভোগ করতে আসেন। অনেকে আবার নৌকা ভাড়া করে দিনব্যাপী এ নৌকা বাইচ উৎসব উপভোগ করতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে নদীর দুই পাড়ের মানুষজন কয়েকদিন ধরেই উৎসবে মেতেছেন। বাড়িতে জামাই-মেয়ে ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে এক মিলন মেলায় পরিণিত হয়। বাড়ি বাড়ি চলছে পিঠা-পায়েসসহ নানা পদের খাবারের আয়োজন। বাড়ির বৌ-ঝিয়েরা কাজ শেষ করে নদীর পাড়ে জমে বসেছেন। আনন্দ ও উল্লাসে মেতে উঠেন তরুণ ও তরুণীরা।

চলনবিল নৌকাবাইচ উৎসব বাঘাবাড়ী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়া, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় অর্ধশত ছোট-বড় নৌকা এ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেন।

নৌকা বাইচে অংশ নেওয়া প্রতিযোগী জাকির হোসেন বলেন, ১৫ বছর ধরে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায়য় অংশ গ্রহণ করে আসছি। আমরা বিভিন্ন জেলার নৌকা বাইচ খেলতে যাই। এক সময় প্রতি সপ্তাহে নৌকা বাইচ হতো। এখন অনেক কমে গেছে ঐতিহ্যবাহী এ নৌকা বাইচ।

আরেক প্রতিযোগী আলমগীর হোসেন বলেন, প্রতিবছরই বিভিন্ন এলাকায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায়য় অংশগ্রহণ করে থাকে। আজ সিংড়া আত্রাই নদীতে আমাদের দল অংশ নেয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্ট করছি যেন প্রথম পুরস্কারটি নিতে পারি।

কাউছার আলী নামে এক প্রতিযোগী বলেন, আমাদের নৌকার নাম সোনার তরী। আমরা প্রতিবছর নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করি। আশা করছি, আমরা এবার বিজয়ী হবে। 
চলনবিল নৌকাবাইচ উৎসব বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব রুহুল আমিন জানান, চলনবিল নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন জেলার ছোট-বড় মিলে প্রায় অর্ধতাধিক নৌকা অংশ গ্রহণ করছে। পুরো চলনবিলেরর মানুষ উৎসবে মেতেছেন। নদীর দু-পাড়ে মিলনমেলায় পরিণিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থীরা এসেছেন।

চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসবের উদ্যোক্তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী এড. জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, উত্তঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌকা বাইচ উৎসবে আজ দিনব্যাপী প্রায় ৩৪ নৌকা অংশগ্রহণ করেছে। উত্তঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বড় বড় নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, নৌকা, নদী, খাল-বিল পানি এসব আসাদের তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে আজকের এ নৌকা বাইচ প্রতিয়োগিতার আয়োজন।

এ উৎসবে সকল ধর্মের, সকল শ্রেণির মানুষ আনন্দ করেছে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে আজ নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী দল স্বপ্নের তরী দলকে ১৫০ সিসি একটি মোটর সাইকেল, দ্বিতীয় বাংলার বাঘ দলকে ফ্রিজ এবং তৃতীয় শাপলা এক্সপেস দলকে টিভি প্রদান করা হয়েছে।