শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮
সমগ্র বাংলাদেশের মতোই নাটোর জেলার মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের বীরত্বগাথা যুদ্ধ ইতিহাসের এক গৌরবময় উপাখ্যান। নাটোর ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন ৭ নং সেক্টরের অধীন। যুদ্ধকালীন অবস্থায় অনেকে ভারতে প্রশিক্ষণে গেলেও পরবর্তীতে ভৌগলিক অবস্থার কারণে অনেকে নাটোরে ফিরতে ব্যর্থ হন। তাঁরা বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন।
নাটোর ছিল পাক বাহিনীর ২নং সামরিক ক্যাথলিক মিশন। ক্যাথলিক মিশনের হত্যাযজ্ঞে নাটোর জেলায় ১৬টি গণকবর বর্তমানে চিহ্নিত আছে। এগুলো হলো নাটোর সদর থানার (১) ফুলবাগান, (২) রেজা-রঞ্জুর মাজার, (৩) ছাতনী ভাবনী, (৪) লিয়াকত ব্রীজ মাজার, (৫) আহম্মদপুর ব্রীজ কাদিম সাতুরিয়া, (৬) ছাতিয়ানতলা মোকরামপুর; লালপুর থানার (৭) গোপালপুর শহীদ সাগর, (৮) ওয়ালিয়ার ময়না; গুরুদাসপুর থানার (৯) উত্তর নাড়ীবাড়ী, (১০) বিয়াঘাট; সিংড়া থানার (১১) কলম, (১২) হাতিয়ানদহ এবং বড়াইগ্রাম থানার (১৩) ধানাইদহ ব্রীজের পার্শ্ব, (১৪) পারকোল- নগর, (১৫) কালীন ঘুম- মাঝগ্রাম ও (১৬) কালিকাপুর-জোয়ারী ইউপি।
উত্তাল মার্চে নাটোরের সংখ্যালঘুদের গ্রামগুলো যখন একের পর এক পুড়ছিল, সহায় সম্বলহীন হয়ে সাধারণ মানুষ শুধুমাত্র এক কাপড়ে জীবন রক্ষার্থে একত্রিত হতে থাকে, নিরাপদ আশ্রয় প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বনপাড়া মিশন অভিমুখে যাত্রা করে। বনপাড়া মিশনে ফাদার পিনোস এর নাম নাটোর জেলার মানুষ সারাজীবন মনে রাখবে, কারণ মহান মুক্তিযুদ্ধে এই ক্যাথলিক ফাদার আশ্রয় থেকে শুরু করে সর্বাত্ত্বক সহায়তা করেছে নাটোরের মানুষকে।
জানা যায়, ৩ মে ১৯৭১ পাক হানাদার বাহিনী মিশন ক্যাম্পাসটিও ঘিরে ফেলে। মিশনের ভেতরের হিন্দুদের অবস্থান জেনে মিশনের অফিস, হোস্টেলসহ সর্বত্র তল্লাশি করে ধলা গ্রামের ২২ জনসহ অন্যান্য স্থানের আশ্রিত পরিবারের ৮৬ জন যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষকে আটক করে এবং সেই সাথে কয়েকজন নারীকে ট্রাকে তুলে নেয়। তাদের সবাইকে রক্ষার জন্য ফাদার পিনোস-এর পুনঃ পুনঃ অনুরোধ উপেক্ষিত হয়। সেই মুহূর্তে সিস্টার কারমেলা মেজর শেরওয়ানীর পা চেপে ধরেন এবং অনেক কাকুতি-মিনতি করার পর শেষ পর্যন্ত শুধু নারীদের ছেড়ে দেয়।
পাক বাহিনী ঐ দিন সন্ধ্যায় আটক ৮৬ জনকে নাটোর দত্তপাড়া সংলগ্ন ফতেঙ্গাপাড়ায় নারদ নদের সংযুক্ত খালের পার্শ্বে নিয়ে গুলি চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আটকদের মধ্যে অনীল নামক একজন গুলিবিদ্ধ হয়েও অলৌকিক ভাবে প্রাণে বেঁচে যায়। লাশগুলোকে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল যে স্থানে সেই খালের পার্শ্বে সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছোট্ট একটি স্মৃতিস্তম্ভ।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হলেও নাটোর শহর শত্রুমুক্ত হয় ২১শে ডিসেম্বর ১৯৭১। ভারতীয় মিত্র বাহিনী লেঃ জেনারেল লছমন সিং ও বিগ্রেডিয়ার রঘুবীর পানুর কাছে পাক বাহিনীর মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ ও বিগ্রেডিয়ার আহম্মদ আশরাফ সহ অন্যান্য পাকসেনারা নাটোরে আত্মসমর্পণ করে। নাটোরে আত্মসমর্পণকারী পাকবাহিনীর অফিসার ছিল ১৪১ জন।
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়