শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৩ ১৪৩১
|| ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২২
নিজ কন্যা সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি এবং স্বামী কর্তৃক অপবাদের বিচার ও গ্রেপ্তারের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং আদালত ভবনের প্রধান ফটকের সামনে আমরণ অনশন করছেন নাটোরের জয়িতা নারী মরিয়ম খাতুন।
গতকাল সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর থেকে তিনি তার সন্তান এবং এক স্বজনকে সাথে নিয়ে এই আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেন ওই নারী।
আমরণ অনশন কর্মসূচি চলাকালে ভুক্তভোগী নারী মরিয়ম জানায়, ‘তার বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রামে। তার গত ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট পাবনা জেলার আটঘরিয়া থানার মো. শাহ আলমের সাথে ইসলামী শরিয়া অনুযায়ী বিয়ে হয়।
পরে তাদের ঘরে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান আসে। কন্যার বয়স যখন ৬ মাস তখন মরিয়মকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে তালাক দিয়ে ফেলে যায় স্বামী মো. শাহ আলম। পরে মরিয়মের ঠাঁই হয় বাপের ভিটায়। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ত্যাগ শিকার করে মাস্টার্স পাস করা মরিয়ম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পায়। চাকরির পাশাপাশি সফল জয়িতা নারী হিসেবে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর থেকে পুরস্কার পান তিনি।
তিনি জানান, বর্তমানে তার কন্যা শিশু মিথিলার বয়স ৯ বছর। সে এ বছর পঞ্চম শ্রেণি থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পদার্পণ করবেন। এ অবস্থায় স্কুলে ভর্তির জন্যে প্রয়োজন হয় পিতার জাতীয় পরিচয়পত্রের। কিন্তু কিভাবে পাবেন পরিচয়পত্র-তা নিয়ে শঙ্কায় মরিয়ম। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তালাক দেওয়া তার স্বামী বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। পরে কন্যাসহ নিকট স্বজনকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি আনার জন্যে স্বামী শাহ আলমের দ্বারস্থ হন মরিয়ম। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি না দিয়ে তাদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন মরিয়ম।
পরে আজ দুপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং আদালত ভবনের প্রধান ফটকের সামনে কন্যাকে নিয়ে স্বামী শাহ আলমের বিরুদ্ধে আমরণ অনশন শুরু করেন।
অনশন চলাকালে মরিয়ম জানান, তার স্বামী নারী শিশু নির্যাতন মামলার আসামি। মানব পাচার মামলার আসামি। তিনি তার গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এসময় তিনি বিদ্যুৎ মন্ত্রী, মাননীয় প্রধান মন্ত্রী, আইন মন্ত্রী, পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ডের চেয়ারম্যান সকলের সহযোগিতা চান। বিচার না পাওয়া পাওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন মরিয়ম।
এদিকে মরিয়মের কন্যা মিথিলা খাতুন বলেন, আমি ছোট থাকতেই আমার বাবা আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর থেকে আমরা মামার বাড়িতে থাকি। সে আমার কোনো খোঁজখবর নেয় না। আমার ভরণ পোষণ বহন করে না। এখন আমি স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য বাবার আইডি কার্ড প্রয়োজন। কিন্তু তিনি আমাকে আইডি কার্ড না দিয়ে আমাদের অপমান করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। পিতা হিসেবে আমি আমার শিক্ষা খরচ প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা ও স্কুলে ভর্তির জন্য ওনার আইডি কার্ডের দামিতে অনশনে বসেছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি তা আমাকে দিবেন আমি আমরণ অনশন চালিয়ে যাব।
মরিয়মের নিকট স্বজন ও বাংলাদেশ নারী মুক্তি আন্দোলনের সদস্য রুপালী খাতুন বলেন, আমার ফুফু (মরিয়ম) বিয়ের পর অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে। ওনার স্বামী ওনাকে তালাক দেওয়ার পর দেনমোহরের টাকা দিয়ে দেয়। মেয়ের বিষয়ে মামলার রায় দিয়েছে এক হাজার টাকা। বর্তমানে এক হাজার টাকায় কিছুই হয় না। তারপরে সে টাকাটাও দেয় না। ওনার মেয়ে এখন ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে গেলে বাবার পরিচয়পত্র লাগে। জানুয়ারি মাস চলে গেছে এখনো মেয়েটি স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। আমরা সেই নাটোর থেকে এসেছি। ওনাকে অনেক বুঝিয়েছি তারপরেও তিনি আইডি কার্ড দেয়নি। বরং তাদের সঙ্গে আরও খারাপ ব্যবহার করেছে। মেয়েটির বাবা পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান। তবু মেয়েটি এখন রাস্তায় বসে আছে। আমরা চাই শাহ আলমের একটি উপযুক্ত শাস্তি হোক। সরকার যেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
তবে এ ব্যাপারে স্বামী মো. শাহ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়