শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৭ ১৪৩১
|| ১১ শাওয়াল ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০
সৃষ্টির উষালগ্ন থেকে প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য আলাদাভাবে নির্ধারিত। তবে একজনের ভাগ্য অপরজনের সাথে জড়িয়ে দিয়ে সৃষ্টিকর্তা নিশ্চিত করেছেন মানব জাগতিক শৃঙ্খলা। এই চিরায়ত ধারার দৃশ্যমান বহমানতা চোখে পড়ে খুব কমই।
চিন্তাধারার এমন বাস্তবিক পর্যবেক্ষণ সকালে দেখা যায় নাটোর শহরের নীচাবাজার কাচাবাজারের মাছের বাজারে। চোখ থেমে যায় কিছু নারীর উপর। সারিবদ্ধভাবে বসেন তারা। সামনে তাদের আঁশবটি। পাশে রাখা ছাই। যারা মাছ কিনছেন, তাদের কেউ কেউ এসে দাঁড়াচ্ছেন তাদের সামনে। হাতে থাকা মাছভর্তি থলে হাতে তুলে দিচ্ছেন। থলের ভেতরে থাকা মাছগুলো সযত্নে কুটে আবার ব্যাগে ভরে দিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন ২০ থেকে ৩০ টাকা।
এভাবেই প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্রেতাদের মাছ কুুটে দেন আয়েশা, ফাতেমা, আমেনা, জুলেখা, মালতি, রেখারাণী, রমিজান বেগমসহ কয়েকজন নারী। একদম নিম্নবিত্তের সংসার তাদের। কারো স্বামী রিক্সা চালক, মজুর, মুচি বা কাঠমিস্ত্রি। স্বামীর সামান্য আয়ে চালানো সংসারে একটু স্বচ্ছলতা আনতেই প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ ঘন্টা মাছ কুটেন তারা। প্রতিকেজি মাছ কুটে নেন ২০ থেকে ৩০ টাকা। প্রতিদিন এভাবে ২০০ থেকে ২৫০টাকা রোজগার করেন তারা। তবে সপ্তাহে ছুটির দিন শুক্রবার ক্রেতাসমাগম বেশী হওয়ায় বাড়ে মাছে কেনাবেচা। তখন বেশি মাছ কুটে উপার্জনও কিছুটা বাড়তি হয়।
কর্মব্যস্ত জীবনে শহরের একক পরিবারগুলোতে দৈনন্দিন কেনাকাটা বা রান্নাবান্নার মতো জরুরী কাজও। সময় বাঁচাতে প্রতিনিয়ত করা যেখানে সম্ভবপর হয় না, সেখানে মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে কাটা গৃহকর্ত্রীর জন্য কখনও কখনও বাড়তি ঝামেলার মনে হয়। সেই অনাগ্রহ কিছুটা উপার্জনের পথ সুগম করেছে মাছ কুটা নারীদের। তবে এতেও নিহিত এক অব্যক্ত বেদনা যা এসব নারীদের মলিন মুখ জানান দেয়।
জানতে চাইলে আমেনা বেগম ক্ষীণ স্বরে বললেন, মাছ আমরা কুটি বাপ কিন্ত এমন অনেক মাছই কুটি যা বছরে একদিন কিন্না খাওয়ার খ্যমোতা (ক্ষমতা) আমারে নাই।
মালতি রাণী বলেন, ভাতের কষ্টই তো শ্যাষ কষ্ট লয়। বাইচতে (বাঁচতে) হইলে আরো কিছুক লাগে। মাছ কুটার ট্যাকা ওইসগ কাজে লাগে।
জুলেখা বেগম বলেন, মানুষ মাছ কিনলে, আমরা খাইতে পারি, চলতে পারি একটু ভালো কইরা। বাড়ির বৌ-ঝি রা মাছ কুইটতে চায় না বইলাই আমরা তা কুইটা দিচ্চি।
নারী শ্রমিকদের অন্য কোন চাওয়া নেই। শুধু একটু বেশি মাছ কুটতে পারলে কিছু টাকা বাড়তি নিতে পারেন তারা।
স/এমএস
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়