রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১৫ ১৪৩১
|| ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০২৩
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের নিপীড়ন বন্ধে বিশ্ব নেতাদের এক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুদ্ধ-অস্ত্রের খেলা বন্ধ না হলে অবিরাম কষ্ট পাবে সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-২০২৩’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় চামড়া শিল্পকে উন্নত করে আরও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক যুদ্ধ থামতে না থামতেই ইসরাইল আবার ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা শুরু করেছে। এরইমধ্যে ফিলিস্তিনের অনেক জায়গা দখল করেছে ইসরাইল। আর এখন তো ফিলিস্তিন একটি অবরুদ্ধ উপত্যকায় পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ অত্যাচার বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ যুদ্ধ আর অস্ত্রের খেলা বন্ধ করতে না পারলে সাধারণ মানুষ বেশি কষ্ট ভোগ করছে। এ কষ্ট যেন সাধারণ মানুষ না পায় সেটি আমরা চাই। আমরা শান্তি চাই।’ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই বিশ্বে শান্তি বজায় থাকুক। এ ধরনের যুদ্ধের পরিস্থিতি যেন না হয়। দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনুষ্ঠানে চামড়া শিল্পকে আরও লাভজনক করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো প্রজেক্টে উল্লেখ থাকা সাপেক্ষে নিজেরাই চামড়া প্রসেস করে রপ্তানি করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না। আর ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটা কেন্দ্র দরকার। সেটাকে আরও আধুনিকায়ন করা, উন্নত করা, মানসম্পন্ন করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ সময় অঞ্চলভিত্তিক ট্যানারি শিল্প তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তৈরির আশাবাদ প্রকাশ করেন। এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে দেশকে এগিয়ে নিতে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য কমানোর কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেন আর না থাকে।’ এ খাতের ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী পৃথক চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন এবং এ শিল্পের জন্য আরও ১০০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়ার ঘোষণাও দেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, পরিবেশগত দিক বিবেচনায় ট্যানারি শিল্পকে আমরা সাভারে স্থানান্তর করেছি। সেটাকে আরও উন্নত করে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন করব। চামড়া শিল্প উন্নয়নের জন্য ‘চামড়া শিল্প উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’ আমরা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনে করে দেব, সেই ঘোষণা করছি। ছোটখাটো সমস্যা যেন আর না হয় সেজন্য এখন সাভারে করেছি, পরবর্তীতে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে অঞ্চলভিত্তিক ট্যানারি শিল্প গড়ে তুললে চামড়ার ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। এটাকে আমরা বড় করে তুলব। দেশের চামড়া শিল্পকে রপ্তানির সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে ধরা হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলে আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্সের শর্ত পরিপালনে ঢাকার হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলোকে সাভারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। তবে দীর্ঘ সময়েও সেই চামড়া শিল্প নগরী এখনো পরিপূর্ণভাবে পরিবেশ ও শিল্পবান্ধব হিসেবে গড়ে ওঠেনি। বিপুল বিনিয়োগে শিল্প নগরী স্থাপন হলেও সেখানে বর্জ্য নিষ্কাশনের জটিলতা রয়েই গেছে। যে কারণে শিল্প উদ্যোক্তারা স্বতন্ত্র বিশেষ কর্তৃপক্ষ গঠনে গত কয়েকদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ কর্তৃপক্ষের অধীনে চামড়া শিল্পনগরী উন্নয়ন ও তা পরিচালনায় দায়িত্ব দেওয়ার দাবি তোলেন তারা। তিন দিনের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সেই কর্তৃপক্ষ গঠনের ঘোষণা এলো। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের নীতিমালা ইতোমধ্যে করা হয়েছে। তিন বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব হবে ২০২৫ সালে। পাদুকা ছাড়া অন্যান্য পণ্যে চামড়ার ব্যবহার বাড়ানোর নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালে যেন ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয় সেটা আমি চাই। চামড়া পণ্য ও পাদুকা শিল্প গড়ে তোলার জন্য অন্তত ১০০ একর জমি বরাদ্দ থাকবে। এখানে একজন উদ্যোক্তাকে আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে বরাদ্দ দেব।’ অনুষ্ঠানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের প্রচলিত লাল ফিতা ধারণা সেটার অবসান হলে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে, দেশ আরও উন্নত হবে। আমাদের একটা মানসিকতা আছে যে, আমলারা ভাবেন যে আরেকটু টাইট দিতে পারলে বোধহয় সব ভালো হবে, সবসময় সেটা ভালো হয় না। দ্রুত সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন, সেই নীতিতে আমি বিশ্বাস করি। আমি চাই কাজের ক্ষেত্রে লাল ফিতার দৌড়াত্ম্য যেন আর না থাকে। আমি চাই যত দ্রুত, দ্রুত আমরা রাজনৈতিকভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারি, আবার আটকে যাই। সময় নষ্ট করার মতো সময় নেই, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে।
চামড়ার পাশাপাশি আরও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যেটা আমাদের জন্য মূল্যবান হবে, আরও বেশি আমরা অর্থ উপার্জন করতে পারব। সেই সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করতে চাই। আমদানি পণ্যটা যাতে দ্রুত খালাস করা যায় সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিচ্ছি এবং নেব। বন্দরগুলোকে আমরা আরও উন্নত করছি। কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে সময় সুযোগের কথা বলা হয়েছে, আমরা দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা করব। প্রধানমন্ত্রী আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয়ভাবে নিজেরাই পণ্য তৈরি বাড়াতে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজে মনযোগ দিতে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশী ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেরা কিছু করতে পারি কি না সেটার দিকে নজর দিতে হবে। আমরা আমাদের দেশের নামে পণ্য বাজারজাত করতে পারি কি না সেটা এখন দেখতে হবে।’ এজন্য সরকার বিশ্বজুড়ে নতুন বাজার খুঁজছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করার জন্য আমরা নতুন নতুন বাজার খুঁজছি। আমি যখন যেই রাষ্ট্রে যাই, সেই দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করি। বৈঠক করে তাদেরকে আমি নির্দেশনাটা দেই।’ তিনি বলেন, এখন ইকোনোমিক ডিপ্লোমেসি, এখন আর পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি নেই। কোন কোন দেশে রপ্তানিটা বাড়ানো যায় বা আমদানির ক্ষেত্রে কোন সুবিধাটা বেশি পেতে পারি, কোথায় কী চাহিদাটা বেশি, কোথায় কী দক্ষ জনশক্তিটা দরকার সেটা আমরা খুঁজি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে এসে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অপরাজিতার সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়