রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১
|| ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
জীবনের জন্য জীবিকা। বিচিত্র জীবিকার উদ্ভব জীবনধারণের জন্যই। এ জীবিকাকে ছোট করে দেখার উপায় নেই। আমাদের দেশের গ্রাম-গঞ্জ-শহরে কত বিচিত্র ও বিস্ময়কর জীবিকা আছে, অনেকেই তা জানি না। খবরও রাখি না। তেমনি এক বিচিত্র জীবিকা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ। তা-ও আবার লাল পিঁপড়ার ডিম। বনজঙ্গলে ঘুরে-ঘুরে এ ডিম সংগ্রহ করেন তারা। মাছ শিকারিদের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান হচ্ছে লাল পিঁপড়ার ডিম। মাছ শিকারিদের চাহিদা মেটাতে বনজঙ্গলের গাছগাছালির ডাল-পালা-পাতা থেকে এসব ডিম সংগ্রহের পর সেগুলো বিক্রি করে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে চলে এক শ্রেণির মানুষের জীবনজীবিকা।
খাগড়াছড়িতে লাল পিপঁড়ার ডিম সংগ্রহ করে তা বিক্রির আয়ে চলছে দুই শতাধিক পরিবার। শুনতে অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, ঐ পরিবারের কর্তারা বছরের পর বছর ধরে বনজঙ্গলে ঘুরে গাছের ডাল ও পাতার আড়াল থেকে খুঁজে সংগ্রহ করেন লাল পিঁপড়ার ডিম। খাগড়াছড়ির রামগড়, মানিকছড়ি, মাটিরাঙ্গা, লক্ষ্মীছড়ি, গুইমারা ও পানছড়ির বিভিন্ন গ্রামে এ পেশায় নিয়োজিত আছে দুই শতাধিক পরিবার। এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় মাটিরাঙ্গার রামশিরা এলাকায়। তাদের সঙ্গে ঘুরে ও কথা বলে জানা যায়, বিচিত্র এ পেশার রোমাঞ্চকর গল্প। রামশিরার জসিম উদ্দিন জানান, তিন বছর আগেও মানুষের জমিতে কামলার কাজ করতেন। কৃষিকাজ সব সময় না থাকায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। একদিন লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে বিক্রির নতুন পেশার কথা জানতে পারেন তিনি। সেই থেকে এলাকার অন্যদের সঙ্গে মিলে বনজঙ্গলে গিয়ে সংগ্রহ করতে থাকেন ডিম। এখন মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে দেড়-দুই কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারেন; যা বিক্রি করে তার সংসার ভালোভাবেই চলছে বলে জানালেন।
একই এলাকার মো. গফুর মিয়া জানান, গাছের উঁচু উঁচু ডালপালা থেকে লম্বা বাঁশ ও লাই বা টুকরির মাধ্যমে ভাঙা হয় পিঁপড়ার বাসা। সেসব বাসা থেকে সংগ্রহ করা হয় ডিম। তবে সব পিঁপড়ার বাসায় ডিম পাওয়া যায় না। লাল পিঁপড়ার বাসায় পাওয়া যায় ধবধবে সাদা ডিম। বড় আকারের বাসা থেকে পাওয়া যায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত খুঁজে গড়ে এক-দেড় কেজি ডিম পাওয়া যায়। ইদানীং আশপাশে পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায় না। তাই দূরদূরান্তে যেতে হচ্ছে। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটি করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। বাসা থেকে সংগৃহীত পিঁপড়াসহ ডিম রাখা হয় এক ধরনের কাগজের প্যাকেটে। দিন শেষে টেবিলের ওপর জাল ও কাপড় দিয়ে ডিম থেকে আলাদা করা হয় পিঁপড়া। কয়েক পদ্ধতিতে ডিম থেকে পিঁপড়া আলাদা করে তা মেপে বুঝিয়ে দেওয়া হয় পাইকারদের। আর এক কেজি পিঁপড়ার ডিম পাইকারদের কাছে বিক্রি করে তারা পান ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
মাটিরাঙ্গার পাইকার জাহাঙ্গীর আলম জানান, বৈশাখ থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত মূলত লাল পিঁপড়ার ডিম ভালো পাওয়া যায়। শীতে গাছের পাতা ঝরা শুরু হলে পিঁপড়ার সংখ্যা কমে যায়। তখন অর্ডার নিলেও পার্টিদের ডিম দিতে হিমশিম খেতে হয়। পিঁপড়ার ডিম মাছের খামারে খাবার হিসেবে ব্যবহূত হয়। এছাড়া শৌখিন মাছশিকারিরা বড়শিতে এ ডিম ব্যবহার করেন। সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে যে দরে কেনেন, তা থেকে ৫০-১০০ টাকা লাভে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও ফেনীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছে তা বিক্রি করেন পাইকাররা। জাকির হোসেন নামে আরেক পাইকার জানান, এক যুগ ধরে তিনি এ কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এখন তার দেখাদেখি অনেকে এ কাজ করছেন।
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়