পলকের শ্যালকের ইটভাটায় পুড়ছে কৃষকের ফসল

নাটোরের সিংড়ায় আওয়ামী লীগের সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের ইটভাটার ধোঁয়ায় কৃষকের ফসল ও গাছপালা পুড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ, দীর্ঘ এক যুগ ধরে এমএসপি নামে একটি অবৈধ ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এলাকার শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবর্তী নারীসহ সাধারণ মানুষ। 

এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক ও সিংড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি।   

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে উপজেলার আগপাড়া শেরকোল বন্দরহাট এলাকায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তোলেন আব্দুল বারী নামে এক ব্যবসায়ী। এরপর থেকেই ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আশপাশের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জমির ফসল নষ্ট ও বসবাসরত সাধারণ মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়; কিন্তু বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক ও শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুল হাবীব রুবেলের কারণে কেউ কোনো অভিযোগ করতে সাহস পাননি। তখন সমাজের দুই-একজন ব্যক্তি প্রতিবাদ করলেও চেয়ারম্যানের বাহিনীর হুমকির মুখে চোখ-মুখ বন্ধ করে থাকতে হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর পর রাতারাতি ভাটার সাইনবোর্ড থেকে প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেলের নাম মুছে দিয়ে এটি আব্দুল বারী অ্যান্ড পার্টনার্স নামে বহাল তবিয়তে পরিচালিত হচ্ছে। 

স্থানীয় আগপাড়া শেরকোল গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুল জব্বার বলেন, এই ইটভাটা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এলাকায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার আম ও ড্রাগন ফল বাগান পুড়ে গেছে। প্রতিবাদ করায় এলাকা ছাড়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে স্থানীয়দের নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি। 

তিনি বলেন, এর আগে প্রতিমন্ত্রী পলকের শ্যালক রুবেল এটি পরিচালনা করতেন, তখন তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি। একমাত্র আমিই প্রতিবাদ করেছিলাম। আর এ কারণে আমার গোয়াল ভর্তি গরু চুরি করে গিয়েছিল; কিন্তু দেশ ছেড়ে আওয়ামী লীগ পালানোর পরও এখন আবার বিএনপির নাম ভাঙিয়ে এই ইটভাটা চালানো হচ্ছে। 

আগপাড়া শেরকোল গ্রামের কৃষক রশিদা বেগম, আদরী খাতুন, হৃদয় হোসেন, মোর্শেদ প্রামাণিক, মনিরুল ইসলাম, রাকিব হোসেনসহ অন্তত ১৫ জন ভুক্তভোগী জানান,  ইটভাটা প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওই এলাকায় উৎপাদিত ধান, ভুট্রা, আম, জাম, কলা, নারকেল, সুপারি, সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় এলাকার শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবর্তী নারীসহ সব বয়সি মানুষ শ্বাসকষ্ট, বক্ষব্যাধিসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা বন্ধে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। 

বর্তমানে এমএসপি ইটভাটা পরিচালনাকারী আব্দুল বারী বলেন, সব নিয়ম-কানুন মেনে সেখানে ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। আমার ভাটার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সঠিক নয়। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ বলেন, স্থানীয়দের পক্ষ থেকে করা এমন একটি অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। ভাটা পরিচালনাকারীকে জমিতে ফসল থাকার সময় বিষাক্ত ধোঁয়া (গ্যাস) ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে। 

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের কপি এখনো হাতে এসে পৌঁছায়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।