শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৯ রমজান ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ৬ অক্টোবর ২০২২
বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি মসলা ‘ভ্যানিলা’। পরাগায়ন জটিলতায় দেশে চাষাবাদ সম্ভব না হওয়ায় এ মসলা আমদানির ওপরই নির্ভর করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তবে এ জটিলতা কাটিয়ে দেশের মাটিতেই চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) গবেষক।
২০০৪ সাল থেকে দীর্ঘ গবেষণার পর সফল হয়েছেন শেকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড এএএফ জামাল উদ্দিন।
ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কার বিশ্বের সর্বোচ্চ ভ্যানিলা উৎপাদনকারী দেশ হলেও ভারতেও শুরু হয়েছে এর বাণিজ্যিক চাষ। বেকারি শিল্প ও নির্যাস শিল্পের অন্যতম উপাদান ভ্যানিলা পডের মূল্য কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাই ভ্যানিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। অধ্যাপক জামালের মতে, এই মসলার বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতেও।
ভ্যানিলা মূলত অর্কিড জাতীয় গাছ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় ও আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়। ছায়া পছন্দকারী উদ্ভিদটি মাটির সংস্পর্শে যাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রেখে খুঁটির সঙ্গে নেট দিয়ে কোকোডাস্ট বেঁধে অবলম্বন তৈরি করে দিতে হয়। গাছটি বেড়ে ওঠার সময় পরাগায়নের সুবিধার জন্য হাত দিয়ে ওঠানামা করিয়ে দিতে হয়।
মূলত কাটিং পদ্ধতিতে বংশুবৃদ্ধিপ্রাপ্ত এই উদ্ভিদটি জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেলে দোঁআশ ঝুরঝুরা মাটিতে বেড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে মাটির পিএইচ ৫.৩ থেকে ৫.৬ রাখতে হয়। ভ্যানিলা চারা রোপণের তিন থেকে চার বছর পর ফুল আসতে শুরু করে। একেকটি থোকায় ১৫-২০টি ফুল থাকে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি করে পড হয়।
ভ্যানিলা উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা এর ফুলের বৈচিত্র্যময় গঠন যা স্বাভাবিক পরাগায়নে বাধা দেয়। সাধারণত প্রাকৃতিক পরাগায়নের উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন করা হয়ে থাকে। ভ্যানিলা ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ডের মাঝে ঠোঁটসদৃশ একটি পর্দা (রোস্টেলাম) থাকায় পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে পতিত হতে পারে না।
তবে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন জানান, পর্দাটি নিডল দিয়ে সরিয়ে সামান্য চাপ দিলেই পরাগায়ন সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে কাজটি করতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। একজন দক্ষ শ্রমিক দিনে এক হাজার থেকে দেড় হাজার ফুল পরাগায়ন করতে পারবেন।
পরাগায়ন থেকে পড পরিপক্ক হতে ৬ থেকে ৯ মাস সময় লেগে থাকে। বছরে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৬০০ কেজি পড সংগ্রহ করতে পারবেন একজন কৃষক। পড পরিপক্ক হওয়ার শেষের দিকে এতে গ্লুকোভ্যালিন উৎপাদিত হয়, যা ফারমেন্টেশনের সময় গ্লুকোজ ও ভ্যানিলিনে পরিণত হয়। যা থেকেই তৈরি হয় এর মোহনীয় নির্যাস।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে এই অর্থকরী ফসল। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে এরই মধ্যে ভ্যানিলা চাষ হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে ভ্যানিলা কাটিং করে শত শত ছাদবাগানিদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই গবেষক।
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়