বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১২ ১৪৩১
|| ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
আজকের নাটোর
প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০
প্রাথমিকের গন্ডির পর থেমে গিয়ে ছিল কিশোরী গৃহবধু হোসনে আরা বেগমের লেখা-পড়া। ১৯৮১সালে মাত্র ১৩বছর বয়সেই ঢাকার বিক্রমপুরের লুৎফর রহমানের সাথে বিয়ে হয় তার। খুব অল্প বয়সে বিয়ে হলেও স্বামীর সংসারের নতুন পরিবেশে নিজেকে ক্ষাপ খাইয়ে নেন তিনি। কিন্তু বাধ সাধে সংসারের অভাব-অনটন। স্বামী লুৎফর রহমান বিভিন্ন কাজের চেষ্টা করে গেলেও সেভাবে সফল হতে পারছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত সংসারের হাল ধরেন কিশোরী বধু বর্তমানে সফল নারী উদ্যোক্ততা হোসনে আরা বেগম। নিজের শয়ন কক্ষে মাত্র দশটি মুরগি লালন-পালন দিয়ে শুরু হলেও আজ তিনি শত শত মুরগির মালিক। বনে গেছেন কোটিপতি। নিজের পাশাপাশি ভাগ্য ফিরিয়েছেন এলাকার বেশ কিছু নারীদের। এমন এক সফলতার গল্প বলছিলাম নাটোর শহরের উত্তর চৌকিরপার এলাকার জিশান পোল্ট্রি হ্যাচারির মালিক হোসনে আরা বেগমের।
হোসনে আরা বলেন, শুরুতে সম্বল ছিল মাত্র দশটি মুরগি। আলাদা কোন জায়গা ছিল না। নিজেদের থাকার ঘরের মধ্যে মুরগিগুলো রাখতাম। তবে খুব সহজ ছিলনা পথচলা। পরিবার থেকেই প্রথম বাধা পেয়েছি। কিন্তু যখন পরিবারের সবাই দেখলো মুরগি পালন করে লাভ হচ্ছে তখন আর কেউ বাধা দেয়নি বরং সহযোগিতা করেছে সবাই। বর্তমানে ১০টি মুরগি থেকে আজ ৫হাজার মুরগির মালিক হোসনে আরা বেগম। প্রতিদিন তার এই খামার থেকে ৪হাজার ডিম আসে।
সেখান থেকে দুটি হ্যাচারিতে ৮টি মেশিনের মাধ্যমে ৩হাজারের ওপরে বাচ্চা উৎপাদন হয়। যেগুলো বর্তমানে নাটোর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী সহ বিভিন্ন এলাকায় তার হ্যাচারিতে উৎপাদিত বাচ্চা সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া হোসনে আরা খামারে বর্তমানে ৫০জন নারী কর্মচারী রয়েছে। নারীদের সংসার পরিচালনা করতে কতটা কস্ট করতে হয়, সে উপলব্ধি থেকে তিনি নারীদের তার খামারে চাকরি দিয়েছেন। তারা সবাই সংসার সামলানোর পাশাপাশি তার খামার কাজ করে বাড়তি আয় করছে।
উদ্যোক্ততা হোসনে আরা বলেন, ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করতে সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংক ৯শতাংশ সুদ হারে তাকে ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পর থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সুদ গ্রহন করতে থাকে। একজন উদ্যোক্ততাকে টাকা দেওয়ার পর থেকেই যদি সুদ আদায় হয় তাহলে সে খামার টিকিয়ে রাখতে পারবে না। অন্তত দুই বছর পর থেকে সুদ আদায় করা হলে অনেক খামারি সফল হবে।
তিনি আরও বলেন, মুরগির খামার বা হ্যাচারিতে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ বিল গ্রহন করা হয়। এনিয়ে আমরা স্থানীয় জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্নজনের কাছে ধর্না দিয়েছি। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। কথা হয় হোসনে আরার স্বামী লুৎফর রহমানের সঙ্গে।
তিনি জানান, এখন হ্যাচারিতে বছরে উৎপাদন হয় ১৫ লাখ মুরগীর বাচ্চা। শুরুটা ছিল একেবারেই অল্প পরিসরে। এখন আমাদের রয়েছে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর হ্যাচারি। প্রতি বছরে এই হ্যাচারি থেকে উৎপাদন হয় ১৫ লাখ মুরগীর বাচ্চা। যা থেকে লাভ কয়েক লাখ টাকা। শুধু আমাদের নয়, হোসনে আরার হ্যচারিতে কাজ করে ভাগ্য বদলেছে অনেকের।
কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ৫০ জন নারী-পুরুষের নাটোরের জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, হোসনে আরার এমন উদ্যোগে অনেকেই অনুপ্রানিত হচ্ছেন। জেলা প্রাণী সম্পদ থেকেও তাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ডিম এবং বাচ্চা আনা নেওয়ার জন্য তাকে একটি গাড়ি অনুদান দেওয়া হয়েছে।
ajkernatore.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়